Header Ads

Header ADS

যেভাবে আমি ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে ইন্টার্নশিপ পেলাম।

 


লেখকঃ পবিত্র কুমার দাস, শিক্ষার্থী, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।


অনার্স শেষ বর্ষে পড়ার সময়ই জানতে পারি আমার বিভাগে মাস্টার্সের কারিকুলামে থিসিস/ ইন্টার্ন /কোর্স আছে। প্রথম দিকে দ্বিধায় ছিলাম ইন্টার্ন / থিসিস / কোর্স থেকে কোনটি করব।  মেডিকেল সেক্টর যেমন- মেডিকেল, ডেন্টাল, নার্সিং ইত্যাদি   প্রতিষ্ঠান গুলো নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষ শেষ করার পর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নে পাঠায় তাদের শিক্ষার্থীদের। মেডিকেল সেক্টরে কিছুটা কাজের অভিজ্ঞতার সুবাদে বুঝতে পারি আমাদের অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ প্রয়োজন ।  আর এখানেই প্রকৃত শিক্ষাটা হয়ে থাকে। ভাবতে ভাবতে বুঝতে পারি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গ্যাপটাই হচ্ছে  বাস্তব প্রয়োগটা কম।  অন্যদিকো চাকুরির বাজারে সবাই দক্ষ লোক চায়। বর্তমান চাকরির বাজারে আবেদন করতে গেলে দেখা যায় অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রাথমিক আবেদন করাও দুস্কর! আর যারা সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছে তাদের জন্য এটা আরও বড় প্রতিবন্ধকতা। কেউ চাকরিই দেয় না তো কাজের অভিজ্ঞতা কিভাবে হবে? তখন মনে হয়েছে আগামীর কর্মজীবনকে সহজ করতে ইন্টার্নশিপ এর কোন বিকল্প নেই!

 

তখন থেকেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই ইন্টার্ন করব কিন্তু কিভাবে কোথায় করব তা জানিনা।  যেহেতু বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের প্রথম শিক্ষার্থী  আমি অন্যদিকে  প্রথম ব্যাচ থেকে কেও ইন্টার্ন করেনি সেক্ষেত্রে আমার জন্য বিষয়টা কঠিন হয়ে যায়।  আবার  আমি ইন্টার্ন করব  কথা শুনে আমার এক সহপাঠীই একদিন বলে ফেলেছে আমি ভুল করছি ইটার্নশিপ করব বলে  !  যাইহোক আমি দমে যানি। পরবর্তীতে আমার প্রায়োরিটি প্রতিষ্ঠান খোঁজ করতে থাকি যেখানে ইন্টার্ন করতে পারব।  স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে যেই বিষয়গুলো পড়েছি বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন  সামনে চলে আসে।  উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে বর্তমান শহর উন্নয়ন, বাজেট বরাদ্দ এবং কাজের পরিধির উপর ভিত্তি করে সিটি কর্পোরেশনকে তুলনামূলক একটিভ প্রতিষ্ঠান মনে হয়েছে।

সেখান থেকেই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনকে ( ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত) উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনায়  নিয়ে ভাবতে থাকি।

পরবর্তীতে অনলাইনে খোঁজ করতে থাকি ইন্টার্ন প্রপোজাল লেটার এবং ফরমেটটা কেমন হবে বা আমি কি কি লিখব। আমার শিক্ষকদের কাছে যাই এবং   বিভিন্ন ধরনের টিউটোরিয়াল ভিডিও এবং অনলাইন সার্চ করে একটি প্রপোজাল লেটার তৈরি করি এবং তা আমাদের ব্যাচের সম্মানিত কো- অডিনেটর জনাব সাদিক হাসান শুভ (সহকারী অধ্যাপক,  স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ)   স্যারকে দেখাই।  স্যার চিঠিটা দেখে যখন ঠিকঠাক বললেন তখনই প্রিন্ট করে ফেলি।  এরই মাঝে নিয়মিত মাস্টার্সের ক্লাস, মিড ইত্যাদি চলতে থাকে। তখন মাথায় নতুন চিন্তাবাসা বাঁধে।   প্রপোজাল লেটার ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর লিখা তাহলে মেয়র মহোদয়কে কিভাবে পাব বা বিষয়টা কিভাবে উপস্থাপন করব ওনার সামনে! তারপরও নিজে নিজে অনেক প্রস্তুতি নিলাম, সামনে গিয়ে কী বলব না বলব। আবার আরেকটি প্রপোজালের কপি করলাম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা  বরাবর দিয়ে কারনটা ছিল যদি লাগে?  অর্থাৎ বিষয়টা নিয়ে বিস্তর ভেবেছি এবং বিকল্প বিষয় গুলোও মাথায় রেখেছি। পরবর্তীতে  একদিন সকল কাগজপত্র নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের উদেশ্য যাত্রা করি।  সিটি কর্পোরেশন গিয়ে প্রথমেই যাই পরিচিত এক অফিসারের রুমে উদেশ্য ছিল ওনি কোনো হেল্প করে কি না আমাকে এই বিষয়ে।  যাইহোক ওনার কথাবার্তা শুনে কিছুটা নিরাশ হয়ে গেলাম হেল্পতো দূরের কথা! 

ওনার রুম থেকে বের হয়ে বিভিন্ন ভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেয়র মহোদয় সার্কিট হাউজ পার্কের পাশে কোনো একটা রেস্টুরেন্টে  মিটিং করছেন।  তখনি পার্কের উদেশ্যে হেটে হেটে রওনা দেই  আর ভাবতে থাকি কিভাবে ওনার সামনে যেতে পারি। তারপর মেয়র মহোদয়ের সাথে রাজনীতিতে যুক্ত একজন ( আমার পূর্বপরিচিত) কল দেই যেন সে দেখাটা করিয়ে দেয়। সে আমাকে আশ্বাস দেয় দেখা করাবে এবং অনুমতি নিয়ে দিবে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে বলে। তার কথামতো অপেক্ষা করতে থাকি ১ ঘন্টা করে করে ৪/৫ ঘন্টা হয়ে যায় তার দেখা আর পায়নি এর মাঝে কয়েকবার কল দিয়েছি তাকে।  সে ১০ মিনিট/ ২০ মিনিট করে করে আর আসেনি। এক পর্যায়ে সে বলে রাতে দেখা করাবে, অবশ্য বুঝে গিয়েছিলাম তার জন্য সময় ইনভেস্ট করাটা ভুল ছিল।  যাইহোক তাকে কিছু বুঝতে দেয়নি এই বিষয়ে ।  এক অজানা কষ্ট নিয়েই বাসায় আসি এবং ইটার্ন করার ইচ্ছে বাদ দিয়ে দেই। সিদ্ধান্ত নেই কোর্স করব।  কয়েকদিন পর মনে হলো আমাকে এটা করতেই হবে অর্থাৎ ইন্টার্ন বিষয়টা মাথা থেকে কোনো মতেই বের হচ্ছিল না ।  তখন আবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করি সিটি কর্পোরেশনে।  ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের  প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা জনাব অসীম কুমার সাহা  ( ওনার ছেলেকে পড়াতাম) আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে।  সিটি করপোরেশনের গাইডলাইন মতে নতুন প্রপোজাল লেটার লাগবে।  সেক্ষেত্রে তারা কিছু নির্দেশনা দেয় এবং উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক  বিভাগ থেকে আবার প্রোপাজাল নেয় এবং পরবর্তীতে  আমার প্রপোজাল লেটার চীফ ইন্জিনিয়ার,  নগর পরিকল্পনাবিদ,  মেয়র মহোদয়,  প্রধাব নির্বাহী কর্মকর্তা  দ্বারা অনুমোদন হয়। সর্বশেষ  আমার এবং আমার বিভাগ বরাবর আমার ইন্টার্ন অনুমোদন হয়েছে এই সাপেক্ষে চিঠি সাবমিশন হয় এবং ইটার্ন করার সুযোগ পাই।

  


No comments

Powered by Blogger.